সুস্থ থাকতে যে ৫টি আমল করা উচিত
আজকের ব্যস্ত জীবনে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা প্রতিটি মানুষের সবচেয়ে বড় চাহিদা। কিন্তু প্রযুক্তিনির্ভর জীবন, খাদ্যে ভেজাল, মানসিক চাপ আর ইবাদতের অবহেলার কারণে আমরা ধীরে ধীরে ভেতর থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। অথচ ইসলামী জীবনব্যবস্থায় এমন কিছু আমল রয়েছে, যেগুলো নিয়মিতভাবে পালন করলে একজন মানুষ শুধু শারীরিকভাবেই নয়, বরং আত্মিক ও মানসিক দিক থেকেও চিরসুস্থ থাকতে পারে। এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করবো এমনই ৫টি গুরুত্বপূর্ণ আমল নিয়ে, যেগুলো একজন মুসলমানের জীবনে সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
✅ ১. নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা
নামাজ শুধু একটি ইবাদতই নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ লাইফস্টাইল।
নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক মজবুত হয়, আর এই সম্পর্ক মানসিক প্রশান্তির বড় উৎস। চিকিৎসা বিজ্ঞানও বলে—নিয়মিত প্রার্থনা ও ধ্যান মানুষের দুশ্চিন্তা, ভয়, উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
নামাজ আমাদের জীবনে নিয়ম ও শৃঙ্খলা আনে। দিনে পাঁচবার নামাজ আদায়ের মাধ্যমে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সচল থাকে, মেরুদণ্ড সোজা থাকে এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়। বিশেষ করে সিজদার সময় মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়ে, যা মন ও মস্তিষ্ককে প্রশান্ত রাখে।
✅ ২. প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত ও অর্থ বোঝার চেষ্টা করা
পবিত্র কুরআন হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সবচেয়ে বড় হেদায়াত। কুরআনের আয়াত শুধু ধর্মীয় নির্দেশই দেয় না, বরং জীবনের প্রতিটি সমস্যার সমাধানের পথ দেখায়। প্রতিদিন অন্তত ৫-১০ আয়াত তিলাওয়াত এবং তার অর্থ অনুধাবনের চেষ্টা করলে আত্মিক শান্তি আসে এবং দুনিয়ার জটিলতা সহজ হয়ে যায়।
শরীয়তের দিক থেকে এটি একটি মহা সওয়াবের কাজ, আর মানসিক সুস্থতার জন্যও এটি দারুণ কার্যকর। কুরআনের সুরেলা শব্দ মনকে প্রশান্ত করে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
✅ ৩. হালাল ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করা
“হালাল” খাবার শুধু শরিয়তের দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও উপকারী। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“একজন মানুষের হালাল রিযিক গ্রহণই ইবাদতের অংশ।”
ভেজাল ও নিষিদ্ধ খাদ্য আমাদের দেহে বিষ ছড়ায়, মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে। আবার অতিরিক্ত খাওয়াও শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। তাই হালাল ও পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
রাসূল (সা.) বলেন,
“একজন মানুষ তার পেটের তিন ভাগে এক ভাগ খাবার, এক ভাগ পানি, এবং এক ভাগ ফাঁকা রাখবে।”
(তিরমিজি)
এই হাদীসের মধ্যে সুস্থতার পুরো সূত্র লুকিয়ে আছে।
✅ ৪. পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা (তাহারাত ও হাইজিন)
“পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক”—এই বিখ্যাত হাদীসটি শুধু ধর্মীয় দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, স্বাস্থ্য বিজ্ঞানও এটিকে সমর্থন করে।
- নিয়মিত অজু করা শরীরের ৬টি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ পরিষ্কার রাখে, যা জীবাণুর বিস্তার রোধ করে।
- নিয়মিত গোসল, নখ কাটা, পোশাক ধোয়া এগুলো আমাদের দেহকে সুস্থ রাখে।
পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন মানেই রোগমুক্ত ও ফুরফুরে অনুভব করা। এর পাশাপাশি এই আমল আমাদের আত্মিক পবিত্রতাও নিশ্চিত করে।
✅ ৫. সকালে ও সন্ধ্যায় জিকির ও দোয়ার আমল করা
জিকির বা আল্লাহর নাম স্মরণ করা মানে আমাদের হৃদয়কে আলোকিত করা। সকালের শুরুতে এবং সন্ধ্যার শেষভাগে “সুবহানাল্লাহ”, “আলহামদুলিল্লাহ”, “আল্লাহু আকবার”, “আসতাগফিরুল্লাহ”, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” ইত্যাদি পড়লে হৃদয় প্রশান্ত হয়।
দোয়া ও জিকির:
- মানসিক চাপ কমায়
- আত্মবিশ্বাস বাড়ায়
- বিপদ থেকে রক্ষা করে
- আত্মাকে শক্তিশালী করে
আল্লাহ নিজেই বলেছেন:
“যারা আল্লাহর জিকির করে, তাদের অন্তর প্রশান্তি পায়।”
(সূরা রা’দ: ২৮)
🕌 উপসংহার
শুধু ডাক্তার, ওষুধ আর ডায়েটই সুস্থতার একমাত্র মাধ্যম নয়। একজন মুসলমানের জন্য তার দৈনন্দিন আমলগুলোই পারে তাকে ভিতর-বাহির উভয় দিক থেকে শক্তিশালী ও সুস্থ করে তুলতে।
নিয়মিত নামাজ, কুরআন, হালাল খাবার, পরিচ্ছন্নতা এবং জিকির—এই পাঁচটি আমল জীবনে নিয়মিত রাখলে ইনশাআল্লাহ আপনি শরীর, মন ও আত্মায় প্রকৃত অর্থেই সুস্থ থাকবেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই ৫টি আমলকে জীবনের অংশ বানিয়ে দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

